পরিবেশন পরিমাণ (পাঠ ৩)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্যবিজ্ঞান খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য | - | NCTB BOOK
112
112

আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো খাই, সেগুলোর পুষ্টিমূল্য হিসাব করার সুবিধার জন্য এবং দেহের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি পাওয়ার জন্য আমাদের প্রতিটি খাবার নির্দিষ্ট পরিমাণে পরিবেশন করা প্রয়োজন হয়। প্রতিটি খাবার পরিবেশনের জন্য যে নির্দিষ্ট পরিমাণের খাবার নির্ধারণ করা হয় তাকে এক পরিবেশন পরিমাণ খাদ্য বলা হয়। বিভিন্ন খাদ্যের জন্য এক পরিবেশন পরিমাণ ভিন্ন হয়।

১। শস্য ও শস্য জাতীয় খাদ্যশ্রেণি- শক্তি প্রদানকারী সমস্ত খাদ্যের মধ্যে শস্য ও শস্যজাতীয় খাদ্য থেকেই আমরা মোট ক্যালরির অর্ধেকের বেশি পেয়ে থাকি। আমাদের প্রতিবেলার খাবারে শস্যজাতীয় খাদ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকায় চাল, গম, আলু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন সরবরাহ করে।

এক পরিবেশন শস্যজাতীয় খাদ্য

খাদ্যের নাম

পরিমাণ

ভাত

১/২ কাপ

রুটি

মাঝারি ১টা

পাউরুটি

১ স্লাইস

শস্য জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ খাদ্য গ্রহণকারীর পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে। এই শ্রেণির খাদ্য গ্রহণ ক্যালরি চাহিদার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। এই শ্রেণি থেকে প্রতিবেলার খাবারে পরিশ্রমী ব্যক্তির একের অধিক পরিবেশন খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।

২। শাকসবজি ও ফলজাতীয় খাদ্যশ্রেণি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় শাকসবজি ও ফল এই শ্রেণির খাদ্য। প্রাপ্তবয়স্ক স্বাভাবিক পরিশ্রমী ব্যক্তির দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করা দরকার। প্রতিদিন তিন বেলার আহারে ৪ থেকে ৬ পরিবেশন শাকসবজি, ফল দেহের পরিপুষ্টির জন্য অপরিহার্য।

এক পরিবেশন শাকসবজি জাতীয় খাদ্য

খাদ্যের নাম

পরিমাণ

কাঁচা শাকসবজি

৫০ গ্রাম

ফল

৫০ গ্রাম

প্রত্যেক পরিবেশনের পরিমাণ ভক্ষণযোগ্য কাঁচা শাকসবজি বা ফল কমপক্ষে ৫০ গ্রাম। বাকি ২ থেকে ৪ পরিবেশন অন্যান্য সবজি ও ফল থেকে গ্রহণ করা দরকার। এই শ্রেণির খাদ্য থেকে প্রতিবেলার খাবারে পরিশ্রমী ব্যক্তির একের অধিক পরিবেশন খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৩। মাছ, মাংস, ডাল ও বিচিজাতীয় খাদ্যশ্রেণি- এই খাদ্যশ্রেণি থেকে দৈনিক ৬০ থেকে ১২০ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা যায়। আহারে প্রোটিন বহুল খাদ্য থেকে খাদ্য পরিবেশনের পরিমাণ ৩০ থেকে ৬০ গ্রাম। প্রতিদিন প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উভয় শ্রেণি থেকেই প্রয়োজনীয় প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। দৈনিক কমপক্ষে এক পরিবেশন প্রাণিজ প্রোটিন আহারে থাকা বাঞ্জনীয়। সন্তানসম্ভবা মা, প্রাকবিদ্যালয় এবং বিদ্যালয়গামী শিশুর খাদ্যে প্রাণিজ প্রোটিন অত্যাবশ্যক।

প্রোটিনজাতীয় খাদ্য পরিবেশনের পরিমাণ

খাদ্যের নাম

গ্রহণযোগ্য পরিমাণ

মাছ, ছোট বা বড়

৩০-৫০ গ্রাম

গরু বা খাসির মাংস

৩০-৫০ গ্রাম

হাঁসের বা মুরগির ডিম

১ টা

মসুর বা অন্যান্য ডাল

২৫ গ্রাম

চিনাবাদাম

২৫ গ্রাম

৪। দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যশ্রেণি: শিশুদের জন্য এই শ্রেণির খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর পাঁচ মাস বয়স
পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধই যথেষ্ট। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক খাদ্যে দুধ অপরিহার্য নয় তবে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খুবই ভালো উৎস। শিশুদের পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে বয়স অনুপাতে দৈনিক ২০০ থেকে ৬০০ মিলিলিটার দুধের প্রয়োজন হয়। এক পরিবেশনে টাটকা তরল দুধের পরিমাণ ২০০ মিলিলিটার। বিদ্যালয়গামী শিশুরা দৈনিক কমপক্ষে এক পরিবেশন এবং বেশিরপক্ষে ২ পরিবেশন দুধ বা দুধে তৈরি খাবার গ্রহণ করলে তাদের উচ্চমানের প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও রিবোফ্লাভিনের চাহিদা পূরণ হয়।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য এক পরিবেশনের পরিমাণ

খাদ্যের নাম

পরিমাণ

টাটকা তরল দুধ

২০০ মিলিলিটার

১ গ্লাস

ছানা

৫০ গ্রাম

১/২ কাপ

দই

১০০ গ্রাম

১/২ কাপ

পনির

২৫ গ্রাম

২ টে. চামচ

৫। তেল ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যশ্রেণি- স্নেহ বা তেল ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খুবই কম পরিমাণে গ্রহণ করতে
হবে। কারণ এই খাবারগুলো খুব বেশি পরিমাণে খেলে খুব তাড়াতাড়ি শরীরের ওজন বেড়ে যাবে। এজন্য রান্নায় যতটা সম্ভব কম পরিমাণে তেল ব্যবহার করা উচিত এবং মিষ্টিজাতীয় খাদ্য কম পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।

কাজ- ১ ঃ তুমি প্রতিদিন যে খাবারগুলো গ্রহণ করো সেই খাবারগুলোর এক পরিবেশন পরিমাণ উল্লেখ করো।
Content added By
Promotion